বাগধারা মূলত বিশিষ্ট অর্থবোধক একধরনের বাক্যাংশ বা শব্দগুচ্ছ। 'বাগধারা' শব্দের অর্থ কথা বলার 'বিশেষ ঢং' বা 'রীতি'। বাগ্ধারার সাহায্যে বিশেষ ধরনের অর্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ গঠিত হয়। বাগ্ধারা ইংরেজি 'ইডিয়ম' (Idiom) শব্দের সমার্থক।
পৃথিবীর সব ভাষাতেই বিশিষ্টার্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। বাংলাতেও অজস্র বাগধারা আছে। বাংলা ভাষার অনেক শব্দই তাদের নিজস্ব অর্থ ছাড়াও বিশিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইঙ্গিতবহ ও সূক্ষ্ম তাৎপর্যমণ্ডিত। যেমন: 'অর্ধচন্দ্র' বলতে 'অর্ধেক চাঁদ' না বুঝিয়ে 'গলাধাক্কা' বোঝায়। অনুরূপ 'তাসের ঘর' বলতে 'তাস দ্বারা নির্মিত ঘর' না বুঝিয়ে 'ক্ষণস্থায়ী' কোনো কিছুকে বোঝায়। সুতরাং আক্ষরিক অর্থকে ছাপিয়ে যখন কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে বাগধারা বলে।
বাগধারা ভাষা ব্যবহারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে উৎসারিত। এর নেপথ্যে ব্যক্তিক ও সামাজিক নানা ঘটনা বা প্রসঙ্গ যুক্ত হয়ে থাকে। বাগধারা ভাষার একটি গৌরবময় ঐতিহ্য। যে জাতির ভাষা যত প্রাচীন, সে জাতির ভাষায় বাগধারার ব্যবহার তত বেশি। বাংলা ভাষার হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। তাই বাঙালির মননগত অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য অজস্র বাগধারা সৃষ্টি হয়েছে।
টনক নড়া (চৈতন্যোদয় হওয়া) প্রথম সাময়িক পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় তার টনক নড়ল।
ঠোঁট কাটা (স্পষ্টভাষী) আফাজ মিঞার মুখে কিছুই আটকায় না, ঠোঁট কাটা যাকে বলে।
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য বস্তু) চাকরি পেয়ে ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে দেখাই পাওয়া যায় না।
ঢাকের কাঠি (মোসাহেব) তুমি তো বড় সাহেবের ঢাকের কাঠি, তিনি যা বলেন তুমিও তাই বল।
তীর্থের কাক (সাগ্রহে প্রতীক্ষাকারী) প্রবাসী ছেলের বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় বাবা-মা তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন।
থ বনে যাওয়া (স্তম্ভিত হওয়া) তার কাণ্ড দেখে আমি তো থ বনে গেলাম।
দহরম মহরম (ঘনিষ্ঠতা) ম্যানেজারের সঙ্গে আজমল সাহেবের খুব দহরম মহরম।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) টাকা থাকলে দুধের মাছির অভাব হয় না।
ধামাধরা (চাটুকারিতা) সমাজে ধামাধরা লোকের অভাব নেই।
নয় ছয় (অপচয়) জাভেদ জমি বিক্রির টাকাগুলো নয় ছয় করে ফেলল।
পুকুর চুরি (বড় রকমের চুরি) অসাধু কর্মচারীরা পুকুর চুরি করে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়েছে। -
বকধার্মিক/ বিড়াল তপস্বী (ভণ্ড সাধু) মুখে নীতিবাক্য আওড়ালেও লোকটা আসলে বকধার্মিক/বিড়াল -তপস্বী।
ভরাডুবি (সর্বনাশ) দোকানে আগুন লেগে ফজলু মিঞার ভরাডুবি হয়েছে।
ভিজে বিড়াল (কপটচারী) সে একজন ভিজে বেড়াল, তাকে চেনা সহজ নয়।
যক্ষের ধন (কৃপণের কড়ি) যক্ষের ধনের মতো সে তার টাকাকড়ি আগলে আছে, কাউকে দুই পয়সার সাহায্যও করে না।
রাঘব বোয়াল (সর্বগ্রাসী ক্ষমতাসীন ব্যক্তি) উচ্চপদে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি রাঘব বোয়াল হয়, তবে দেশের উন্নতি হবে কেমন করে?
লেফাফাদুরস্ত (বাইরের ঠাট বজায় রেখে চলেন যিনি) আলম মিঞা এমন লেফাফাদুরস্ত যে বাইরে থেকে দারিদ্র্য বোঝা যায় না।
শাঁখের করাত (উভয় সংকট) সত্য বললে বাবা বিপদে পড়েন, আর মিথ্যে বললে মা বিপদে পড়েন-আমি পড়েছি শাঁখের করাতে।
শাপে বর (অনিষ্টে ইষ্ট লাভ) বড় সাহেব হারুনকে শাস্তি না দিয়ে দিলেন প্রমোশন, একেই বলে শাপে বর। -
হ-য-ব-র-ল (বিশৃঙ্খলা) জিনিসপত্র ছড়িয়ে ঘরটাকে তো একেবারে হ-য-ব-র-ল করে রেখেছ।
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল) হাতের পাঁচ এ কটি টাকা দিয়েই আমাকে বাকি কটা দিন চলতে হবে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)
১। 'কৈ মাছের প্রাণ' বলতে কী বুঝায়?
ক. যা সহজে মরে না
খ. এক জাতের মাছ
গ. মাছের প্রাণ স্থায়ী নয়
ঘ. কৈ মাছ খুব শক্তিশালী
২। নিচের কোন বাক্যে অর্ধচন্দ্র বাগধারার সঠিক প্রয়োগ হয়েছে?
ক. বালকটিকে অর্ধচন্দ্র দেখাও।
খ. চোরটিকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করো।
গ. আকাশে অর্ধচন্দ্র দেখা যায়।
ঘ. মা শিশুকে অর্ধচন্দ্র দেখাচ্ছে।
common.read_more